এন.সি জুয়েল, স্টাফ রিপোর্টার
কুমিল্লার হোমনা উপজেলার ৪নং চান্দেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে নানা অনিয়মের অভিযোগ।ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যদের সাথে তৈরি হয়েছে যোগাযোগের দূরত্ব।অনাস্থাকারীদের অভিযোগ, মোজাম্মেল হক চান্দেরচর ইউনিয়ন পরিষদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।তিনি বেশির ভাগ সময় ঢাকায় অবস্থান করেন,মাঝে মধ্যে এলাকায় এসে মিটিং না করে ইউপি সদস্যদের কাছ থেকে রেজুলেশনে সই নিতেন।সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে প্রকল্প দাখিল করে টিআর,কাবিখা,কাবিটা,এলজিএসপি ও কর্মসৃজন প্রকল্পসহ বেশিরভাগ প্রকল্পের কাজ না করেই অথবা সামান্য কাজ করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।এছাড়াও তিনি ইউনিয়ন পরিষদের অফিস না করে ঢাকায় বেশির ভাগ সময় অবস্থান করায়,ইউনিয়নের সাধারণ জনগণের সেবা নিতে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়।তাদের বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে পাওয়া যায় না তাকে,এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সনদ (নাগরিক সনদ, চারিত্রিক সনদ, ওয়ারিশ সনদ,প্রত্যয়নপত্রসহ ইত্যাদি ) সনদসমূহে স্বাক্ষরের জন্য গুনতে হয় অপেক্ষার প্রহর।ফলে জনগণের পড়তে হয় নানা জটিলতায়।অপেক্ষার প্রহর কখনো গুনতে হয় দিন থেকে মাস। কখনও বা কয়েক মাস অবধি।এমনটাই অভিযোগ করেন চান্দেরচর ইউনিয়নের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সেবাগ্রহীতা।তাদের দাবি তাকে বহিষ্কার করে পুনরায় এই ইউনিয়নে নির্বাচন দিয়ে সঠিক চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হোক সাধারণ জনগণের স্বার্থে।গত ৪ই জুন ২০২৪ ইং তারিখে কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান শাখা কর্তৃক ‘২০২৩-২৪ অর্থ বছরে পবিত্র ঈদুল আযহা ২০২৪ উপলক্ষে উপজেলা ওয়ারী ‘ভিজিএফ খাদ্য শস্য প্রদান’ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।যার অংশ হিসেবে ৪নং চান্দেরচর ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দকৃত চাউলের পরিমান ছিল ১২.৯৭ মেট্রিক টন।যার সম্পূর্ণটাই সাধারণ অসহায় গরিবদের মাঝে বিতরণ করার কথা থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক কিছু চাউল ১৩ জুন ও ১৪ জুন তারিখ বিতরণ করেছেন ; কিন্তু সিংহভাগ অংশ( প্রায় ৬ মে.টন) বিতরণ না করে পরিষদের গোডাউন এ রেখেছিলেন।পরবর্তীতে হোমনা ইউএনও ক্ষেমালিকা চাকমার হস্তক্ষেপে তা ঈদের আগে ১৫ই জুন ২০২৪ ইং তারিখে সাধারণ গরিব-অসহায় জনগণের মাঝে বিতরণ করা হয় বলে জানিয়েছেন ইউপি সচিব।এছাড়াও বরাদ্দকৃত খাদ্যও সুষ্ঠুভাবে বন্টন না করে তিনি তা নেতাকর্মীদের দিয়ে বিক্রি করার অভিযোগ উঠে আসে এলাকাবাসীর কাছ থেকে।এছাড়াও কয়েকমাস আগে ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে ইউএনও বরাবর ৪নং চান্দেরচর ইউনিয়ন পরিষদের ৯ জন সাধারণ ইউপি সদস্য ও ২ জন ইউপি মহিলা সদস্যগণের স্বাক্ষরিত একটি অনাস্থা বিষয়ক দরখাস্ত জমা দেওয়া হয়।যা পরবর্তীতে ইউএনও মহোদয় মেম্বারদের সমন্বয়ে তাকে সাধারণ ভাবে ক্ষমা করেন।পরবর্তীতে ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হকের অনিয়ম ও দূর্নীতির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় গত ২৪ জুন ২০২৪ইং তারিখে জেলা প্রশাসক ও ইউএনও বরাবর ইউপি সদস্যগণ পুনরায় অনাস্থা দরখাস্ত দাখিল করেন।পরবর্তীতে আবারও গত ৮ জুলাই ইউএনও এবং ৯ জুলাই জেলা প্রশাসক বরাবর ইউপি সদস্যগণ অনাস্থা দরখাস্ত করেন।অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষরকারী ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন,’ ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়ম,ভিজিডির উপকারভোগীদের টাকা নিজ একাউন্টে জমা রাখা,মেম্বারদের স্বাক্ষর জাল করে প্রকল্প কমিটি দিয়ে টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করায় ১১ জন সদস্য অনাস্থা প্রস্তাব দিয়ে দরখাস্ত করেছি’।ইউনিয়ন ট্যাক্সের টাকা নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এই ইউপি চেয়ারম্যানের ওপর।ইউনিয়ন ট্যাক্স বাবদ ৩০০ টাকা নেয়া হলে তিনি সরকারি খাতায় উল্লেখ করেন ১০০-১১৫ টাকা।যার বাকি অংশ তিনি নিজে আত্মসাৎ করেন।এছাড়াও রয়েছে তার বিরুদ্ধে নানাবিধ অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ।এই চেয়ারম্যানকে বহিষ্কার করে সুষ্ঠু তদন্তের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও হোমনা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট দরখাস্ত দাখিল করেন ৪নং চান্দেরচর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যগণ।অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হকের মোবাইলে বারবার কল দিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।