ইয়াছিন আরাফাত, স্টাফ রিপোর্টার
কুমিল্লার চান্দিনায় তিন সৎ ভাইয়ের রোষানলে ভূমিহীন হয়ে বিচারের প্রত্যাশায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অপর ভাই ইব্রাহীম মাহমুদ দুলাল।আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা সত্বেও একই সম্পত্তি একাধিকাবার নামজারীর আবেদন করে কখনও বাতিল আবার কখনও নামজারী করায় অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ভূমি অফিসের বিরুদ্ধে।ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার দোল্লাই নবাবপুর ইউনিয়নের নাটিঙ্গী গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত ফজর আলী প্রধানের ছেলে ইব্রাহীম মাহমুদ দুলাল এর সৎ ভাই বোনেরা বাবার পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে তাকে বঞ্চিতের অভিযোগ করেন।স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় ফজর আলী প্রধান তিন বিয়ে করেন। মৃত্যুকালে তিনি চার ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে যান। তার মধ্যে তার ৩য় স্ত্রী ফিরোজার একমাত্র সন্তান ইব্রাহীম মাহমুদ দুলাল। ফজর আলী প্রধানের মৃত্যুর পর তার ১ম দুই স্ত্রীর ছেলে-মেয়েরা ৩য় স্ত্রী ও তার সন্তানকে জোর পূর্বক বাড়ী থেকে বের করে দেয়। বাবা ফজর আলীর মৃত্যুর দীর্ঘ দিন পর সৎ ভাই বোনেরা এক সময় জানান দেয় যে, তাদের বাবা তার দুই স্ত্রী সহ তাদের সন্তানদের সকল সম্পত্তি ওছিয়ত (উইল) দলিল করে গেছেন। তার ৩য় স্ত্রী ও সন্তানকে কোন সম্পত্তি দেন নাই। ওছিয়ত দলিল মূলে তারা গত ২০১১ সালের ১৭ই নভেম্বর ভূমি অফিসে নামজারী মামলা (যার নং ৩৫৫) এর মাধ্যমে পৈত্রিক ওয়ারিশ হিসেবে নামজারী করেন। এই নামজারীতে ইব্রাহীম মাহমুদ আপত্তি জানান। ভূমি অফিসে ওই আপত্তিকে এড়িয়ে নামজারী করে দেন। পরবর্তীতে এই জমি স্থানীয় এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন জমির বাজার মূল্যের অর্ধেক দামে জমিগুলো ক্রয়-বিক্রয় করে এবং অবৈধভাবে ভূমি অফিস থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নামজারী করে নেন।এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দোল্লাই নবাবপুরের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান মিয়া এলাকায় তিনি ভূমিদস্যু শাহজাহান হিসেবে পরিচিত। তিনি ভূমিদস্যুতা করে অবৈধভাবে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। তিনি ও তার ভূমিদস্যু বাহিনী ভোক্তভোগী ইব্রাহীম মাহমুদ দুলাল এর প্রাপ্য পৈত্রিক সম্পত্তি তার সৎ ভাইদের থেকে নূন্যতম মূল্যে ক্রয় করেন এবং অবৈধভাবে নামজারী করার চেষ্টা করেন। ভোক্তভোগী উপায় অন্তু না পেয়ে ২০২০ সালে কুমিল্লা জেলা জজ কোর্টে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার বিষয়ে ভূমি অফিসকে অবহিত করলে ২০২১ সালের ২৬ জানুয়ারী নামজারী মামলা (যার নং ২৪১৫) বাতিল করেন তৎকালীন সহকারী কমিশনার নাঈমা ইসলাম।কিন্তু পরবর্তীতে নতুন সহকারী কমিশনার রাকিবুল ইসলাম যোগদানের পর ২০২১ সালের ১৫ই জুলাই নামজারী মামলা (যার নং ৪৯৫৯) গোপনে ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান মোটা অংকের টাকার চুক্তিতে আবারও আবেদন করেন। দোল্লাই নবাবপুর ইউনিয়নের ভূমি অফিসের তফশীলদার মোঃ আবুল হোসেন উক্ত বিষয়ে মামলা চলমান থাকার বিষয়টি জানা সত্ত্বেও তিনি নামজারীর প্রস্তাবে সুপারিশ করেন।ভোক্তভোগী বিষয়টি জানতে পেয়ে আবারও আপত্তি জানান। কিন্তু তার আপত্তিতে কোন গুরুত্ব না দিয়ে একই ভূমি অফিস থেকে বাতিল করা নামজারীর আবেদনটি নতুন করে নামজারী প্রদান করা হয়।এই বিষয়ে চান্দিনার সহকারী কমিশনার সৌম্য চৌধুরীর সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, কোন ব্যাক্তি যদি তার জীবন দশায় তার সম্পত্তি ওসিয়ত (উইল) করতে চান, আইন অনুযায়ী তিনি তিন ভাগের দুই ভাগ করতে পারেন। অন্যথায় বিষয়টি বৈধতা পায় না। তার মৃত্যুর পর তার সকল ওয়ারিশ জজ কোটে প্রবেট মাধ্যমে সম্পত্তি বন্টন বা নামজরী করতে হয়। ভূমি অফিস থেকে নামজারীর আবেদন বাতিল ও পরবর্তীতে আবার নামজারী প্রদানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি হয়তবা ভুল বসত: হয়ে গেছে। যদি এমটা হয়ে থাকে তাহলে ভোক্তভুগী আমাদের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবর মামলা করতে পারেন।এইদিকে ভোক্তভোগী ইব্রাহীম মাহমুদ দুলাল পিতার ওয়ারিশ হিসেবে তার প্রাপ্ত সকল সম্পত্তি বুঝে পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।ঘটনার বিষয়ে জানতে মোঃ শাহজাহান মিয়া (চেয়ারম্যান) কে একাধিকবার ফোন করলেও তার মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায় নাই।