ঢাকা , শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম ::
চৌদ্দগ্রামে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বিএনপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা হচ্ছে, যারা লুটপাট করছে তাদের কথা আসছে না : বরকত উল্লাহ বুলু কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত কুমিল্লায় বাঁচার জন্য লড়াই করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও মানবাধিকার কর্মী এবং স্থানীয় সাংবাদিক মওদুদ আবদুল্লাহ শুভ্র চৌদ্দগ্রামে চিওড়া ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ড বিএনপি’র দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত কুমিল্লায় বিজিবি’র অভিযানে ৩৪ লক্ষ টাকা মূল্যের অবৈধ ভারতীয় বাজি জব্দ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নার্গিস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইয়াছিন  কুবিতে অপ্রীতিকর অবস্থায় স্কুল পড়ুয়া দুই যুগল আটক খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হলেন কুমিল্লার আমিন উর রশিদ ইয়াছিন জামায়াতে ইসলামী যুব ও ক্রীড়া বিভাগ কুমিল্লা মহানগরীর ৬নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে ইফতার মাহফিল
নোটিশ :
আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম। সারাদেশে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে, প্রতিনিধি হতে আগ্রহীরা আজই সিভি পাঠিয়ে দিন ইমেইল : cumillabulletin@gmail.com

বাল্যবিবাহ: আইন, ধর্ম ও সামাজিক বাস্তবতা

 

এডভোকেট মোঃ রাসেল আহমেদ (রাফি)

ভূমিকা

বিয়ে মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা সামাজিক, ধর্মীয় ও আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে গভীর তাৎপর্য বহন করে। বাংলাদেশে মেয়েদের জন্য বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর এবং ছেলেদের জন্য ২১ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। আইনটি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে প্রণীত হলেও এর বাস্তব প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

একদিকে, অপ্রাপ্তবয়স্কদের শারীরিক ও মানসিক পরিপক্বতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, অন্যদিকে সামাজিক ও ধর্মীয় বাস্তবতা উপেক্ষা করলে আইনের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বিশেষত, নৈতিক অবক্ষয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের মতো সামাজিক সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে আইন, ধর্ম ও বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

আইনি কাঠামো ও বাস্তবতা

১. বিদ্যমান আইন ও সীমাবদ্ধতা

বাংলাদেশের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ অনুসারে, ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের এবং ২১ বছরের কম বয়সী ছেলেদের বিয়ে করা বা করানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আইনটি বাস্তবায়নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে-

বিশেষ পরিস্থিতির বিধান: আইনের ১৯(১) ধারায় “বিশেষ পরিস্থিতিতে” আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে বিয়ে করার সুযোগ রাখা হয়েছে, তবে এই বিধান কীভাবে প্রয়োগ হবে তা স্পষ্ট নয়।

অভিভাবকদের সীমাবদ্ধতা: দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আদালতের অনুমতি নেওয়ার প্রক্রিয়া জটিল ও ব্যয়বহুল।

আইন ও বাস্তবতার সংঘর্ষ: সামাজিক বাস্তবতা অনুযায়ী, অনেক অভিভাবক বিবাহযোগ্য মেয়েদের উপযুক্ত পাত্রের সন্ধানে থাকলেও বয়সসংক্রান্ত আইনি জটিলতায় পড়েন।

২. সামাজিক বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

বাল্যবিবাহ রোধের উদ্দেশ্য ন্যায়সংগত হলেও, কঠোর আইন প্রয়োগের ফলে কিছু নতুন সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে-

অবৈধ সম্পর্কের বৃদ্ধি: আইনগতভাবে বিয়ে করতে না পারায় অনেক তরুণ-তরুণী অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে।

গর্ভপাত ও স্বাস্থ্যঝুঁকি: অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ও অনিরাপদ গর্ভপাতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দারিদ্র্যের প্রভাব: দরিদ্র পরিবারের জন্য মেয়েদের দীর্ঘদিন অবিবাহিত রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়, ফলে তারা বাধ্য হয়ে আইন লঙ্ঘন করে বিয়ে দেয়।

 

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ

ইসলামে বিয়ের নির্দিষ্ট বয়স নির্ধারণ করা হয়নি, তবে শারীরিক ও মানসিক পরিপক্বতা অর্জনের পর বিয়ে করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অভিভাবকের সম্মতি থাকলে এবং উভয়পক্ষ রাজি হলে বিয়ে বৈধ বলে গণ্য হয়।

বর্তমানে, ১৮ বছরের নিচে বিয়ে করানোর দায়ে অভিভাবক, বর-কনে ও কাজীকে আইনি জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। কিন্তু একই সঙ্গে, যদি এই বয়সসীমার কারণে কেউ অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, তবে সেটি নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর আইন নেই। ফলে এক ধরনের দ্বৈত নীতি গড়ে উঠেছে, যা সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।

আন্তর্জাতিক তুলনা ও অভিজ্ঞতা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিয়ের বয়স ও সামাজিক বাস্তবতা অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করা হয়েছে-

মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া: শরিয়াহ আইনের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ১৬ বছরের নিচে বিয়ের অনুমতি দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্র: বিভিন্ন রাজ্যে পিতামাতার সম্মতি ও আদালতের অনুমতিতে ১৬-১৮ বছর বয়সে বিয়ে করা যায়।

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো: বিয়ের বয়স ১৮ বছর হলেও, কিশোর-কিশোরীদের জন্য যৌনশিক্ষা, মানসিক পরামর্শ ও পরিবারভিত্তিক সহায়তা নিশ্চিত করা হয়।

বর্তমান সমস্যা ও সমাধান

১. বাল্যবিবাহ বনাম অবৈধ সম্পর্ক

আইনের কঠোরতা বৃদ্ধি পেলেও, অবৈধ সম্পর্কের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিয়ে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হলেও কিশোর-কিশোরীরা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করছে, যা নৈতিক ও সামাজিক সংকট তৈরি করছে।

২. গর্ভপাত ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

বাংলাদেশে ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের গর্ভপাতের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে (ইউনিসেফ, ২০২৩)।

সামাজিক বিধিনিষেধ ও সচেতনতার অভাবে অনিরাপদ গর্ভপাতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৩. অর্থনৈতিক বাস্তবতা

দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের দীর্ঘদিন অবিবাহিত রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।

আইনগত সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরা নিরাপত্তাহীন অবস্থার সম্মুখীন হয়।

সমাধান ও সুপারিশ

১. শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি

যৌনশিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা ও পারিবারিক মূল্যবোধের শিক্ষা চালু করতে হবে।

অভিভাবকদের সচেতন করে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করতে হবে।

২. আইনের বাস্তবসম্মত সংস্কার

বিশেষ পরিস্থিতিতে বিয়ের বয়স শিথিল করার বিধান কার্যকর করতে হবে।

আদালতের অনুমতি নেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ ও স্বল্পব্যয়ী করতে হবে।

৩. নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষা

পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে নৈতিকতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

তরুণদের মাঝে আত্মসংযম ও দায়িত্বশীলতা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।

৪. বিকল্প সামাজিক ব্যবস্থা

অপ্রাপ্তবয়স্কদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার, সামাজিক সংগঠন ও ধর্মীয় নেতাদের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে।

উপসংহার

বাল্যবিবাহ, অবৈধ সম্পর্ক ও নৈতিক অবক্ষয়ের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে আইন, ধর্ম ও সামাজিক বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। কঠোর আইন দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়; বরং শিক্ষা, সচেতনতা ও নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার মাধ্যমে টেকসই সমাধান অর্জন সম্ভব।

সরকার, আইনবিদ, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক সমাজের যৌথ প্রচেষ্টায় একটি কার্যকর নীতি নির্ধারণ করা এখন সময়ের দাবি।

ট্যাগস

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

চৌদ্দগ্রামে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

বাল্যবিবাহ: আইন, ধর্ম ও সামাজিক বাস্তবতা

আপডেট সময় ০৫:৩১:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

 

এডভোকেট মোঃ রাসেল আহমেদ (রাফি)

ভূমিকা

বিয়ে মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা সামাজিক, ধর্মীয় ও আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে গভীর তাৎপর্য বহন করে। বাংলাদেশে মেয়েদের জন্য বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর এবং ছেলেদের জন্য ২১ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। আইনটি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে প্রণীত হলেও এর বাস্তব প্রয়োগ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

একদিকে, অপ্রাপ্তবয়স্কদের শারীরিক ও মানসিক পরিপক্বতার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, অন্যদিকে সামাজিক ও ধর্মীয় বাস্তবতা উপেক্ষা করলে আইনের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। বিশেষত, নৈতিক অবক্ষয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের মতো সামাজিক সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে আইন, ধর্ম ও বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

আইনি কাঠামো ও বাস্তবতা

১. বিদ্যমান আইন ও সীমাবদ্ধতা

বাংলাদেশের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ অনুসারে, ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের এবং ২১ বছরের কম বয়সী ছেলেদের বিয়ে করা বা করানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আইনটি বাস্তবায়নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ রয়েছে-

বিশেষ পরিস্থিতির বিধান: আইনের ১৯(১) ধারায় “বিশেষ পরিস্থিতিতে” আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে বিয়ে করার সুযোগ রাখা হয়েছে, তবে এই বিধান কীভাবে প্রয়োগ হবে তা স্পষ্ট নয়।

অভিভাবকদের সীমাবদ্ধতা: দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আদালতের অনুমতি নেওয়ার প্রক্রিয়া জটিল ও ব্যয়বহুল।

আইন ও বাস্তবতার সংঘর্ষ: সামাজিক বাস্তবতা অনুযায়ী, অনেক অভিভাবক বিবাহযোগ্য মেয়েদের উপযুক্ত পাত্রের সন্ধানে থাকলেও বয়সসংক্রান্ত আইনি জটিলতায় পড়েন।

২. সামাজিক বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

বাল্যবিবাহ রোধের উদ্দেশ্য ন্যায়সংগত হলেও, কঠোর আইন প্রয়োগের ফলে কিছু নতুন সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে-

অবৈধ সম্পর্কের বৃদ্ধি: আইনগতভাবে বিয়ে করতে না পারায় অনেক তরুণ-তরুণী অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে।

গর্ভপাত ও স্বাস্থ্যঝুঁকি: অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ ও অনিরাপদ গর্ভপাতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দারিদ্র্যের প্রভাব: দরিদ্র পরিবারের জন্য মেয়েদের দীর্ঘদিন অবিবাহিত রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়, ফলে তারা বাধ্য হয়ে আইন লঙ্ঘন করে বিয়ে দেয়।

 

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ

ইসলামে বিয়ের নির্দিষ্ট বয়স নির্ধারণ করা হয়নি, তবে শারীরিক ও মানসিক পরিপক্বতা অর্জনের পর বিয়ে করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অভিভাবকের সম্মতি থাকলে এবং উভয়পক্ষ রাজি হলে বিয়ে বৈধ বলে গণ্য হয়।

বর্তমানে, ১৮ বছরের নিচে বিয়ে করানোর দায়ে অভিভাবক, বর-কনে ও কাজীকে আইনি জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। কিন্তু একই সঙ্গে, যদি এই বয়সসীমার কারণে কেউ অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, তবে সেটি নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর আইন নেই। ফলে এক ধরনের দ্বৈত নীতি গড়ে উঠেছে, যা সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।

আন্তর্জাতিক তুলনা ও অভিজ্ঞতা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিয়ের বয়স ও সামাজিক বাস্তবতা অনুযায়ী আইন প্রণয়ন করা হয়েছে-

মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া: শরিয়াহ আইনের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ১৬ বছরের নিচে বিয়ের অনুমতি দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্র: বিভিন্ন রাজ্যে পিতামাতার সম্মতি ও আদালতের অনুমতিতে ১৬-১৮ বছর বয়সে বিয়ে করা যায়।

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো: বিয়ের বয়স ১৮ বছর হলেও, কিশোর-কিশোরীদের জন্য যৌনশিক্ষা, মানসিক পরামর্শ ও পরিবারভিত্তিক সহায়তা নিশ্চিত করা হয়।

বর্তমান সমস্যা ও সমাধান

১. বাল্যবিবাহ বনাম অবৈধ সম্পর্ক

আইনের কঠোরতা বৃদ্ধি পেলেও, অবৈধ সম্পর্কের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিয়ে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হলেও কিশোর-কিশোরীরা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করছে, যা নৈতিক ও সামাজিক সংকট তৈরি করছে।

২. গর্ভপাত ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

বাংলাদেশে ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের গর্ভপাতের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে (ইউনিসেফ, ২০২৩)।

সামাজিক বিধিনিষেধ ও সচেতনতার অভাবে অনিরাপদ গর্ভপাতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৩. অর্থনৈতিক বাস্তবতা

দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের দীর্ঘদিন অবিবাহিত রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।

আইনগত সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরা নিরাপত্তাহীন অবস্থার সম্মুখীন হয়।

সমাধান ও সুপারিশ

১. শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি

যৌনশিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা ও পারিবারিক মূল্যবোধের শিক্ষা চালু করতে হবে।

অভিভাবকদের সচেতন করে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করতে হবে।

২. আইনের বাস্তবসম্মত সংস্কার

বিশেষ পরিস্থিতিতে বিয়ের বয়স শিথিল করার বিধান কার্যকর করতে হবে।

আদালতের অনুমতি নেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ ও স্বল্পব্যয়ী করতে হবে।

৩. নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষা

পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে নৈতিকতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

তরুণদের মাঝে আত্মসংযম ও দায়িত্বশীলতা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।

৪. বিকল্প সামাজিক ব্যবস্থা

অপ্রাপ্তবয়স্কদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার, সামাজিক সংগঠন ও ধর্মীয় নেতাদের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে।

উপসংহার

বাল্যবিবাহ, অবৈধ সম্পর্ক ও নৈতিক অবক্ষয়ের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে আইন, ধর্ম ও সামাজিক বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। কঠোর আইন দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়; বরং শিক্ষা, সচেতনতা ও নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলার মাধ্যমে টেকসই সমাধান অর্জন সম্ভব।

সরকার, আইনবিদ, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক সমাজের যৌথ প্রচেষ্টায় একটি কার্যকর নীতি নির্ধারণ করা এখন সময়ের দাবি।