
মুহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ, স্টাফ রিপোর্টার
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় নদীর বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে টেঁটাবিদ্ধসহ অন্তত ৩১ জন আহত হয়েছেন।আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রাত ১০টার দিকে উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের নলচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন মেঘনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল জলিল।এ ঘটনায় বুধবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা বা কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।দলীয় সূত্র জানায়, উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রবিউল ইসলামের অনুসারীদের সঙ্গে ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি আবদুল বারেক প্রধানের অনুসারীদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।বারেক প্রধান ও রবিউল দুজনই নলচর গ্রামের বাসিন্দা।পুলিশ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিউল ইসলাম ও বারেক প্রধানের নেতৃত্বে বিএনপির দুটি পক্ষ দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলন ও নদীপথে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন।এসব ঘটনা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আগেও তাঁরা বিরোধে জড়িয়েছেন।এসব ঘটনার জেরে গতকাল রাতে নলচর গ্রামে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা টেঁটাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান।এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে কয়েকজনের চোখ-মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে টেঁটাবিদ্ধ হয়।আহত ব্যক্তিদের মধ্যে রবিউল পক্ষের ফারুক ও বারেক প্রধান পক্ষের আশরাফুল ইসলামসহ অন্তত ১০ জনের অবস্থা গুরুতর।সর্বশেষ রাত একটার দিকে মেঘনা থানা ও মেঘনা নৌ পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।মেঘনা উপজেলা মহিলা যুবদলের সভাপতি মাহবুবা ইসলাম জানান, মেঘনার চালিভাঙ্গা একটি দ্বীপ ইউনিয়ন। চারপাশে মেঘনা নদী। নলচর গ্রামটি মূল সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন। যার কারণে সেখানে বড় ধরনের কোনো সহিংসতা হলেও পুলিশ পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়। এ কারণে মঙ্গলবার রাতের সংঘর্ষ দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে।বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে মেঘনা থানার উপপরিদর্শক তন্ময় ভট্টাচার্য কুমিল্লা বুলেটিনকে বলেন, পুরো এলাকা এখন বলতে গেলে পুরুষশূন্য।বেশির ভাগ মানুষই এলাকাছাড়া।পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করছে।
এলাকাবাসী জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে নলচরসহ চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মেঘনা নদীর চর থেকে বালু উত্তোলন করে আসছে বিএনপির ওই দুই পক্ষ।আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষ কয়েক দিন আগেও মুখোমুখি হয়েছিল।তাদের কারণে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ।কিছু হলেই দুই পক্ষ অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়।মেঘনা থানার ওসি আবদুল জলিল বলেন, বালুর ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুবদল নেতা রবিউল ও বিএনপি নেতা বারেক প্রধানের লোকজনের সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে রাত একটার দিকে থানা ও নৌ পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে।তিনি বলেন, এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো থানায় কেউ অভিযোগ করেননি।ঘটনার পর থেকে রবিউল ইসলাম ও আবদুল বারেক প্রধানের মুঠোফোন বন্ধ।এ ব্যাপারে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।জানতে চাইলে মেঘনা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল ওদুদ মুন্সি বলেন, রবিউল ও বারেক নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ব্যবসা করেন।বিষয়টি জানতে পেরে তাঁরা তাঁদের সতর্ক করেছেন।কিন্তু তাঁরা তাঁদের কিংবা প্রশাসনের কথা শোনেননি।মঙ্গলবার রাতে বালুর ব্যবসা নিয়ে সংঘর্ষ হয়।তাঁরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করার বিষয়টি প্রমাণিত হলে অবশ্যই দল তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।