
সাখাওয়াত হোসেন (তুহিন) মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কামাল্লা ইউনিয়নের নিমাইজুড়ী নদীর আলগী অংশে বাঁধ দিয়ে ভেকু দিয়ে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে নিচ্ছে চয়নিকা ও ইত্যাদিসহ বিভিন্ন ইটভাটায়। এতে জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশ আইন অনুযায়ী, কৃষিজমির মাটি কাটা দন্ডনীয় অপরাধ। আইনে অপরাধ বলা হলেও প্রশাসনের নিকট অভিযোগ করার পরও রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজনের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দিখা দিয়েছে।সরজমিনে দেখা যায়, একটি মাটিখেকো সিন্ডিকেট চক্র ইট কংকিট দিয়ে নিমাইজুড়ী নদীর উপর দিয়ে বাঁধ দিয়েছে। ওই বাঁধ দিয়ে কামাল্লা উত্তর মাঠের তিন ফসলী কৃষি জমিতে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে চয়নিকা ও ইত্যাদিসহ বিভিন্ন ইটভাটায় মাটি সরবরাহ করছে।জমির মালিক কামাল্লা গ্রামের বিল্লাল চৌধুরী বলেন, আমি এক একর (তিন কানির উপরে) জমির মাটি জালাল উদ্দীন চৌধুরীর কাছে বিক্রি করেছি। তিনি ভেকু মেশিন দিয়ে ওই কৃষি জমি ৫ ফুট গভীর করে চয়নিকা ও ইত্যাদিসহ বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছেন। তাই নিমাইজুড়ী নদীতে ইটের কংকিট ও মাটি দিয়ে বাঁধ তৈরী করে রাস্তা বানানো হয়েছে। এতে কার কি সমস্যা আমি তো বুঝতে পারছি না।মাটি ব্যবসায়ী জালাল উদ্দীন চৌধুরী বলেন, টাকা খায়না কে? প্রশাসন, থানা পুলিশ, সাংবাদিক ও নেতাদের ম্যানেজ করেই এ ব্যবসা করছি। আপনারা ডিস্টার্ব কইরেন না। আপনাদের সাথেও দেখা করব।বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, কৃষি ও পরিবেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ উজ্জ্বল বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১৩-এর ৫ ধারায়) ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা ও পাহাড় নিধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।অন্যদিকে ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষি জমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকা জরিমানা ও দুই বছরের কারাদন্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। একই কাজ দ্বিতীয়বার করলে দায়ী ব্যক্তিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ১০ বছরের কারাদন্ড হবে। এই ক্ষেত্রে এ কাজের সঙ্গে জড়িত জমি ও ইটভাটার মালিক উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পাভেল খান পাপ্পু বলেন, দিন দিন ফসলি জমি হারিয়ে যাচ্ছে। চলতি রবি মৌসুমে উপজেলায় ৩৮ থেকে ৪০ হেক্টর ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। এ ভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কৃষি জমি খেঁাজে পাওয়া যাবে না।মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবদুর রহমান বলেন, নদীতে বাঁধ দিয়ে ডাইব্রেশন তৈরি করার কোন সুযোগ নেই। সহসাই বাধঁটি অপসারণ করা হবে। উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ সাকিব হাসান খান বলেন, আমি একটি মোবাইল কোর্টে আছি। ২/১ দিন সময় দেন, সব ঠিক হয়ে যাবে।
পূর্বাঞ্চল কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আবু তাহের বলেন, বিষয়টি নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলে দিচ্ছি, তিনি ব্যবস্থা নিবেন। অপর দিকে নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালি উজ্জামান বলেন, নদীতে বাঁধ দেওয়া ফৌজদারী অপরাধ। বাঁধ অপসারণ করা আমার কাজ নয়। এগুলো দেখবে উপজেলা প্রশাসন।